বিচারে বিরতি
‘বিচারে বিরতি আনলেও আপনি সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে
পারবেন।'
আশা করি এতক্ষনে পাঠকরা জীবনের লক্ষ্য এবং তার উপযোগিতা সম্পর্কে জেনে গেছেন। এখন এমন একটা বিষয়ের উল্লেখ করছি যা অতি সহজেই আপনাকে আপনার লক্ষ্যের দ্বারে পৌঁছে দেবে। তা হল, নিজের লক্ষ্য পূরণের জন্যও বিচারে বিরতি আনাটাও খুবই জরুরি। যদি আপনি বিচারে বিরতি আনার কলা শিখে যান ও জীবনে তার গুরুত্ব অনুভব করতে পারেন তা হলে তারপরই নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করতে সক্ষম হবে এবং অবশ্যই আপনি লাভবান হবেন। একটু কল্পনা করুন, আপনি নিজের ঘরের (তা শোয়ার ঘর ও হোতে পারে।) সোফাতে বা মেঝেতে বসে নিজের জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে লিখছেন, কিন্তু দুই চার লাইন লেখার পরই মস্তিষ্কে বিভিন্ন প্রকারের চিন্তা আসতে শুরু করে, আপনার অফিসের কোনো কাজের কথা মনে পরতে পারে বা বাড়ির কোনো কাজের কথা, হয়তো ক্রেডিট কার্ডে পয়সা জমা দেওয়ার তারিখ এসে গেছে, হয়তো গাড়ীতে তেল শেষ হয়ে গেছে বা বাচ্চাদের পড়াশোনা জনিত কোনো সমস্যার কথাও মনে পড়তে পারে। এত কথা মাথায় ঘুরতে থাকলে জীবনের লক্ষ্য লেখা সম্ভব কি? এমন অবস্থায় এই কাজ গুলি মেটানোর পরই আপনি নিজের জীবনের লক্ষ্য লিখতে সক্ষম হবেন। এই সময় লক্ষ্য নিয়ে আর কোনো বিচারই করবেন না।
একটা কথা ঠিক যে, যদি আপনি কাগজ পেন নিয়ে লক্ষ্য লিখতে বসে যান আর মাথায় অজস্র অন্য চিন্তা থাকে তাহলে কখনই তা প্রকৃত লক্ষ্য হবে না, সমস্ত চিন্তা দূর করে লক্ষ্য লিখতে বসুন, তা অনেক বাস্তবিক লক্ষ্যে পরিনত হবে, যা আপনাকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবে। আপনি প্রত্যেক মাসে বা তিন মাস অন্তর বা সম্ভব হলে ছয় মাসে একবার অবশ্যই নিজের বিচারে সম্পূর্ণ রুপে বিরতি টানুন।এই ভাবে ভাবতে পারলে তা আপনাকে নিজের লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যবে। আমরা যখন কাজ করি বা নিজেদের লক্ষ্য পূরণের জন্য চেষ্টা করি তখন আমাদের মস্তিষ্কে একাধিক বিচার বিবেচনা আসতে থাকে। লক্ষ্য পুরো করার সময় যদি মাথায় একাধিক চিন্তা ঘুরপাক খায় এবং আমরা যদি কিছু ভুলে যাই তাহলে আমরা কখনই নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব নাতাই মাঝে মধ্যে বিচারের ক্ষেত্রে পূর্ণ বিরতি টানা খুবই জরুরি হয়ে উঠতে পরে। কি ভাবে বিচারে বিরতি আনবেন হয়তো আপনি তা বুঝে পারছেন না, এটা কি কলা, এ সম্পর্কে কোথায় পড়বেন, কোথায় শিখবেন, তাতে কোন লাভ হবে কিনা, তা নিয়ে হয়তো মনে সন্দেহের অবকাশ নেই। যদি আপনি নিজের বিচারে বিরতি টানার প্রক্রিয়া শিখে নিতে পারেন, তাহলে আপনি অসীম মানসিক শান্তি লাভ করতে সক্ষম হবেন তা আপনাকে প্রচুর স্ফূর্তি ও প্রদান করবে। বিচারে বিরতে টানার এটাই সবচেয়ে বড় কারণ। চিন্তার হাত থেকে অব্যাহতি পেতে পারলে আপনি প্রচুর মানসিক শান্তি লাভ করবেন সেই সঙ্গে নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে আরো বেশী করে ভাবতে পারবেন। আপনি পুরুষ, মহিলা, নাবালোক, ব্যাবসায়ি, শিল্পপতি বা বিদ্যার্থী যাই হোন না কেন, বর্তমান পরিবেশের জন্য সকলেরই কম বেশী মানসিক চাপ থাকে। আমাদের দেশে যে ভাবে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ঝড় উঠেছে, তাতে করে প্রতিদিন মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানসিক চাপ দূর করার জনা, মানসিক শান্তি ও স্ফূর্তি লাভের জন্য আপনাকে চিন্তা মুক্তির কলা শিখতেই হবে। তাহলে যে কোন স্তরের মানুষই অনেক বেশী উন্নতি করতে সক্ষম হবে।এই কথা মাথায় রেখে বিচারে বিরতি আনার চেষ্টা করুন। আমাদের শাস্ত্রে এই কলার নামই যোগ নিদ্রা বা ধ্যান৷ আপনি শুয়ে বসে যে ভাবে ইচ্ছা এই কলার অভ্যাস করতে পারেন।
এবার
কিভাবে চিন্তার হাত থেকে মুক্তি পাবেন তার অভ্যাস করা যাক।
সবার আগে আপনি আরাম করে শুন, যদি বসতে চান তাহলে শান্ত হয়ে বসুন কিন্তু শরীর একদম টানটান রাখবেন। এক্ষেত্রে নরলে চলবে না। সবার আগে পরম পিতা পরমেশ্বরের ধ্যান করে আধা মিনিট প্রার্থনা করুন,তাঁকে স্মরণ করে বলুন, হে ঈশ্বর আমার মঙ্গল কররু, আমার পরিবারের মঙ্গল করুন সেই সঙ্গে এই বিশ্বের মানব জাতির মঙ্গল করুন৷ এই বিচার আপনাকে শান্তি প্রদান করবে।এবার পুরো শরীর শিথিল করে দিন। এবার তিন বার ‘ওম’ উচ্চারণ করুন। এই মন্ত্র উচ্চারণের সময় শুয়েও থাকতে পারেন বা বসেও থাকতে পারেন, সশব্দে বা মনে মনে যে ভাবে খুশী আপনি তা উচ্চারণ করতে পারেন, কিন্তু তার জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ রুপে সমর্পন করতে ভুলবেন না। এতে আপনার মানসিক চাপ দূর হবে এবং আপনার মন শান্ত হয়ে যাবে। এবার আপনার শরীর খুবই ভারী লাগতে পারে। নিজের চেতন শক্তিকে শরীরের উপর কেন্দ্রিভূত করুন এবং ভাবুন যে সত্যিই আপনার শরীর ভারী হয়ে গেছে, এবার এই চেতন শক্তির সাহায্যেই অনুভব করার চেষ্টা করুন যে আপনার সম্পূর্ণ শরীর হাল্কা হয়ে গেছে। শরীরের হাল্কা ভাব অনুভব করার চেষ্টা করুন।
এবার একটা ভালো কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করুন, আপনি নিজের ইচ্ছা বা আশার কথা ভাবুন, তা নিয়ে বিচার বিবেচনা করুন। তিন বার মনের ইচ্ছার কথা ভাবুন এবং তিন বার তা আওরান। আমাদের শাস্ত্র অনুসারে বিচারে বিরতির সময় আপনি যদি কোন বিষয় নিয়ে ভাবেন তাহলে ভগবানের অসীম কৃপায় তা অবশ্যই পূরণ হয়। এবার মনের চেতন শক্তিকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। সবার আগে তা বাম হাতে নিয়ে যান ও সেখানে কেন্দ্রিভূত করার চেষ্টা করুন। বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ থেকে শুরু করে পুরো হাতটাই ভালো করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কল্পনা করার চেষ্টা করুন। আপনাকে নিজের চোখ বন্ধ রাখতে হবে। এবার এই চেতনা ডান হাতের দিকে নিয়ে যান, চোখ বন্ধ রেখে আঙুল থেকে শুরু করে পুরো হাতটাই চিন্তা করার চেষ্টা করুন। এবার আপনার চেতনা যাবে আপনার বাম পায়ের দিকে, পায়ের সামনে পিছনের সমস্ত অংশই ঠিক করে ভাবার চেষ্টা করুন। এই সময় চোখ বন্ধ রাখতে ভুলবেন না।
এবার আপনার চেতনা যাবে ডান পায়ের দিকে, পায়ের প্রতিটা আঙুল এক এক করে ভাবার চেষ্টা করুন, চোখ বন্ধ করেই এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। এই চেতনা শরীরের বিভিন্ন ভাগে নিয়ে যান, কখন পেট, কখন পিঠ, কখন পিঠের ডান দিকের কথা ভাবুন কখন পিঠের বাম দিকের কথা।
এবার উপরের ঠোঁট, নিচের ঠোঁট, তারপর একে একে নাক, কান ও চোখ নিয়ে ভাবুন। এই বার আপনি আপনার আরাধ্য দেবতাকে স্মরণ করুন, এই দুই ধ্যানের মধ্যে ত্রিকুটের ধ্যান করুন। এই দুই ধ্যানের মধ্যে ত্রিকুটে এর ধ্যান করলে আপনার একাগ্রতা বৃদ্ধি পাবে, এই কারণেই একে কৈলাশ বলে। এবার নিজের মস্তিষ্কের ধ্যান করুন, চোখ বন্ধ করে শরীরের বিভিন্ন অক্ষগের ধ্যান করুন। সম্পূর্ণ চেতনার সাথে ধ্যান করুন। সব অঙ্গের ধ্যান হয়ে যাওয়ার পর একটু দ্রুত গতিতে সমস্ত অঙ্গের দিকে চেতনা নিয়ে যান এবং তাড়াতাড়ি সমস্ত অঙ্গের ধ্যান করারও চেষ্টা করুন।
আপনার সমস্ত চিন্তা দূরে চলে যাবে, আপনি কোন চিন্তাই করতে পারবেন না। নিজেকে অতি ঘন জঙ্গলের মধ্যে কল্পনা করুন৷ এই জঙ্গল কেমন হবে তা আপনি চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছেন। চোখ বন্ধ করেই এই কল্পনা চালিয়ে যান। ভাবুন এই অজানা অচেনা জঙ্গল সম্পর্কে আপনি কিছুই জানেন না, আপনি খুবি ভয় পাচ্ছেন। খানিকক্ষন অতি ধীর গতিতে যাওয়ার পর হঠাৎই পরিবারের কিছু সদস্যকে দেখতে পান আর আপনার মন আনন্দে নেচে ওঠে। এই আনন্দের কথা কল্পনা করুন। চোখ বন্ধ রাখবেন কিন্তু ঘুমিয়ে পরবেন না। এবার ধীরে ধীরে ওম উচ্চারণ করে চোখ খুলুন। এই কলার সাহায্যে আপনি নিজের সমস্ত চিন্তা দূর করতে সক্ষম হয়েছেন। একেই বলে বিচারে বিরতি। ধ্যান রাখবেন যদি আপনি বিচারে বিরতি আনার কলা শিখে যান তাহলে আপনি অসীম আনন্দ, অক্ষুন্ন মানসিক শক্তি, সর্বদা স্ফূর্তিদায়ক শরীর এবং এক প্রসন্ন মন প্রাপ্ত করবেন। বিচারে বিরতি আনার কলা অভ্যাস করতে পারলে এই সবই আপনি পেতে সক্ষম হবেন।
আপনি নিজের বাড়ি বা কার্যক্ষেত্রে এর অভ্যাস করতে চাইলে খুবই ভালো, পরিবারের অন্য সদস্য এবং আপনার বন্ধুদেরও এই কলা অভ্যাস করতে বলুন এবং অবশ্যই এর পালন করার চেষ্টা করুন।
উপরে যে বিধির কথা বলা হয়েছে তা সুন্দর শব্দ দ্বারা প্রকাশ করে টেপ রেকর্ডারের সাহায্যে রেকর্ড করে রাখতে পারেন। যখন চিন্তার হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করার কথা ভাববেন তখন এই ক্যাসেট চালিয়ে শুনতে থাকুন, দেখবেন দশ মিনিটের মধ্যে আপনার বিচার আপনার নিয়ন্ত্রনে এসে গেছে। আর মস্তিষ্কে কোন ব্যাপারেই চিন্তা থাকবে না। এই প্রনালী, এই কলা যাকে আমাদের শাস্ত্রে ধ্যান চেতন নিদ্রা বা যোগনিদ্ৰা বলে অভিহিত করা হয়েছে তা যে কোন বয়সের ব্যক্তির জন্যই অতন্ত লাভজনক বলে প্রমানিত হতে পারে।
মোটিভেশনাল উক্তি, সেরা অনুপ্রেরণামূলক বাণী, মোটিভেশনাল ক্যাপশন, মোটিভেশন নিয়ে স্ট্যটাস: আমাদের একটি দিন কিংবা পুরো জীবনকে ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো
মোটিভেশনাল উক্তি, অনুপ্রেরণামূলক বাণী, ক্যাপশন, স্ট্যাটাস
No comments:
Post a Comment